ঊর্মিলা হতে পারেননি তিনি, হারিয়ে যান ক্যারিয়ারের মাঝপথেই

তিনি ছিলেন সম্ভাবনাময় অভিনেত্রীদের একজন। পর্দায় আবেদনময়ী উপস্থিতি, গ্ল্যামার মিলিয়ে কেউ কেউ তাঁকে ‘আগামীর ঊর্মিলা মাতন্ডকর’ বলেও ডাকতেন। তবে হঠাৎই বলিউড থেকে কার্যত উধাও হয়ে যান এই অভিনেত্রী।
খ্যাতিমান আলোকচিত্রী জগদীশ মালির মেয়ে অন্তরা বলিউডে পা রাখেন ১৯৯৮ সালে ‘ধুঁধতে রে জায়োগে!’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও তাঁর অভিনয় নজরে পড়ে পরিচালক রাম গোপাল ভার্মার। তিনি অন্তরার মধ্যে খুঁজে পান এক অন্য রকম সম্ভাবনা।

এরপর রাম গোপাল ভার্মার একাধিক ছবিতে দেখা যায় অন্তরাকে—তেলেগু ছবি ‘প্রেম কথা’, ‘মাস্ট’, ‘রোড’, ‘কোম্পানি’, ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’, ‘ম্যায় মাধুরী দীক্ষিত বাননা চ্যাহতি হু’ সিনেমা দিয়ে আলোচনায় আসেন।

সিনেমার দৃশ্যে অভিষেক ও অন্তরা। আইএমডিবি
তবে ‘ম্যায় মাধুরী দীক্ষিত বাননা চ্যাহতি হু’ সিনেমাটিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়, যেখানে তিনি অজয় দেবগনের স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন। ছবিতে একজন সাধারণ মেয়ের মাধুরী দীক্ষিত হওয়ার স্বপ্নকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন তিনি। সমালোচকেরা প্রশংসায় ভাসালেও দর্শক সেভাবে সাড়া দেননি।

২০০৫ সালে ক্যারিয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে চেয়েছিলেন অন্তরা। অভিনয় এবং পরিচালনা—দুই ভূমিকায় আসেন ‘মিস্টার ইয়া মিসেস’ছবিতে। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে অন্তরা অভিনয়জগৎ থেকে সরে আসেন। ২০১০ সালে আবার ফিরে আসেন অমল পালেকারের ‘…অ্যান্ড ওয়ান্স অ্যাগেইন’ সিনেমা দিয়ে। কিন্তু সেটিও অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর আর তাঁকে রুপালি পর্দায় দেখা যায়নি।

সিনেমার দৃশ্যে অন্তরা। আইএমডিবি
ক্যামেরার বাইরের জীবন
২০০৯ সালে অন্তরা বিয়ে করেন জিউ ইন্ডিয়ার তৎকালীন সম্পাদক চে কুরিয়েনকে। তাঁদের কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। ব্যক্তিগত জীবনকে সব সময় গোপন রেখেছেন অন্তরা। গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন, মনোনিবেশ করেন পরিবারে।

বাবার শেষ দিনগুলো নিয়ে বিতর্ক
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে হঠাৎ শিরোনামে আসেন অন্তরা, তবে সেটি কোনো সিনেমার কারণে নয়। অভিনেত্রী মিনক ব্রার দাবি করেন, তিনি মুম্বাইয়ের ভারসোভার রাস্তায় অন্তরার বাবা জগদীশ মালিকে আধা-বস্ত্রহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। এই দাবি ঝড় তোলে সংবাদমাধ্যমে। মিনকের অভিযোগ—অন্তরা নাকি অসুস্থ বাবাকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান অন্তরা। তিনি জানান, তাঁর বাবা মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন না, বরং ডায়াবেটিসের কারণে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন। পাশাপাশি মিনকের উদ্দেশে বলেন, পুরো ঘটনাটি নাকি প্রচারের জন্য সাজানো। কিছু মাস পর, ২০১৩ সালের ১৩ মে, মারা যান জগদীশ মালি।

এখন কোথায় অন্তরা মালি
২০১০ সালের পর আর কোনো সিনেমায় কাজ করেননি, দেননি সাক্ষাৎকার বা কোনো জনসমক্ষে আসেননি। তাঁর বিদায়টি ছিল নিঃশব্দ—একজন সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী, যিনি হয়তো বলিউডের পরবর্তী ঊর্মিলা হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন গ্ল্যামারহীন এক শান্ত জীবন।

তথ্যসূত্র: ডিএনএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *